
ইসলাম দিয়েছে নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা, তার মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: নারী মুক্তির অগ্রদূত। ইসলামী সমাজ কায়েম হওয়ার আগে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও হিন্দু সমাজে নারীদের প্রতি যে বৈষম্য প্রচলিত ছিল তা বর্ণনাতীত। একমাত্র ইসলাম ছাড়া আর সব ধর্মেই নারীকে অভিশাপ বলে মনে করা হয়।
আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে নারীর প্রতি ব্যভিচারের ইতিহাস আজো কেঁদে যায় অনন্ত আকাশে, বাতাসে, সবুজাভ পত্রপল্লবে। পুরুষেরা তখন নারীকে কেবল ভোগ বিলাসের পণ্য হিসেবেই গণ্য করেছিল, মা কী, বোন কী, না ছিল কারোর প্রতি এতটুকু কদর, শ্রদ্ধা-সম্মান, না ছিল মানুষ হিসেবে দেখার মতো মানসিকতা। জাহেলিয়াতের যুগে কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে অভিশাপ হিসেবে জ্ঞান করা হতো। নবজাত কন্যাশিশুকে হয় গলা টিপে না হয় জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করা হতো।
অন্ধকার যুগের সব পাপাচার পদমূলে পিষে দিয়ে আবির্ভূত হলো ইসলামের স্বর্ণযুগ। সব অনাচারের বিরুদ্ধে শান্তির স্লোগান মুখরিত হলো। মহানবী সা: নারীর প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। যে নারীকে পুরুষেরা কেবল ভোগের সামগ্রী মনে করত, যাদের জন্মকে অভিশাপ মনে করা হতো, প্রিয় নবীজী সা: তাদের জন্য রচনা করলেন মহামুক্তির উজ্জ্বল দিগন্ত। ঘোষণা করলেনÑ ‘মাতৃপদতলে সন্তানের বেহেশ্ত’। ধাপে ধাপে নারী পেল তার প্রাপ্ত মর্যাদা ও অধিকার এবং ঘোষণা হলোÑ ‘তোমরা সংযমী হও, নিজেদেরকে আড়াল করে রাখো। ঘরে ও বাইরে তোমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে পর্দাপ্রথার মাধ্যমে সমাধা করো।’অন্ধকার যুগে নারীদের প্রতি সেই ঘৃণ্য আচরণ সম্পর্কে পবিত্র কালামে পাকে আয়াত এসেছে, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে কিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানিহেতু সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে। (সে চিন্তা করে) হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে প্রোথিত করবে।
সাবধান, তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট’ (সূরা আন নাহল : ৫৮-৫৯)।এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যার কন্যাসন্তান আছে, সে তাকে জীবিত কবর দেয়নি, তাকে দীনহীন ও লাঞ্ছিত করেও রাখেনি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন’ (আবু দাউদ)।মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন দৃষ্টিকে নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, দৈহিক কামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের লজ্জাস্থান সম্পর্কে মুক্ত তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে’ (সূরা নূর : ৩১)।বলা বাহুল্য, উচ্ছৃঙ্খল মহিলাদের কারণেই সমাজে নানা ফেতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়। বোরকা পরা মহিলাদের দিকে কোনো ভিনপুরুষ একবারের বেশি দ্বিতীয়বার তাকাতে কুণ্ঠাবোধ করে। সততার প্রতি যে এক অমোঘ শ্রদ্ধা অবলীলায় তার সভ্যতা উদিত হয় হৃদয়ে। আর অর্ধনগ্ন মহিলাদের দেখে আকর্ষিত পুরুষ বারবার বিমোহিত হওয়ার জন্য সে দিকে চোখ ফেলে। হাদিস শরিফে স্পষ্টই বলা হয়েছে, ‘সুন্দরী নারী দেখে যদি কোনো পুরুষ বলে থাকে আমি এতটুকুও দুর্বল হইনি, তবে সে মিথ্যাবাদী।’আরেক হাদিসে আছে, ‘একজন পুরুষ (কুরআনে ঘোষিত যেসব মহিলাকে দেখা দেয়া যায় সেসব মহিলা ছাড়া) একজন মহিলা যখনই কাছাকাছি হয়, ইবলিস তখন তৃতীয় বন্ধু হিসেবে হাজির হয়।
’পুরুষের পে নারীকে অবমাননা আত্ম-অবমাননার শামিল। নারীর তি করলে নিজেকেই তিগ্রস্ত হতে হয়।নারীর অমর্যাদা সে তো সমগ্র মানবতারই অপমান। আইনত পুরুষ চিরকালই নারীর কাছে দায়বদ্ধ। নারীর সঠিক অবদানের ওপর ঋণী হয়ে নারীর সম্মান রার্থে পুরুষ অনস্বীকার্যভাবে বাধ্যগত।একদিন সফরের প্রাক্কালে উটের পা পিছলে যাওয়ার কারণে হজরত মুহাম্মদ সা: ও সুফিয়া রা: উটের পিঠ থেকে পড়ে গেলে হজরত তালহা রা: দৌড়ে এসে হুজুর সা:কে উঠানোর চেষ্টা করলে হুজুর পাক বললেন, ‘আগে মহিলাদের প্রতি ল করুন’।উম্মে ওয়ারাকা বিন্তে আবদুল্লাহ ইব্ন হারিস ইব্ন ইজাইম ছিলেন প্রিয় নবীজী সা:-এর প্রিয়ভাজনেষু। এই আনসারিয়া মহিলার বাড়িতে প্রিয় নবী সা: প্রায়ই যেতেন এবং তাকে শহীদ মহিলা বলে ডাকতেন। তিনিও নবীজী সা:কে অসাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন, আন্তরিকভাবে মহব্বত করতেন। বদর যুদ্ধের সময় তিনি নবী করীম সা:-এর কাছে আরজ করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দিন। আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধাহতদের সেবাযতœ করব, তাদের জরুরি চিকিৎসা করব। আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধে আমাকেও শাহাদতের মর্যাদা দান করতে পারেন।’ রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাকে অবশ্যই শাহাদত নসিব করবেন। তুমি নিশ্চিন্তে বাড়িতে বসে থাকো, তুমি শহীদ।’উল্লেখ্য, নবীজী সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এই মহিলা তার নিজ বাড়িতেই শহীদ হয়েছিলেন। এরপর হজরত ওমর ফারুক রা: বললেন, প্রিয় নবীজী সা: ঠিকই বলেছিলেন। তিনি বলতেন, ‘এসো শহীদার নিকট হাজিরা দেই’ (নবী সা:-এর জীবনের অলৌকিক ঘটনাবলি : মাওলানা খলীলুর রহমান খান)।
কত মহিলাও প্রিয় নবীজী সা:কে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন। কুরআন-হাদিসের আদেশ-নিষেধ মেনে পর্দানশিন থেকে কত মহিলা রাসূল সা:-এর জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়েছেন। ওহুদের যুদ্ধে ইবনে কামেয়া যখন তার দলবল নিয়ে মুসলিম বাহিনীর প্রতিরোধ শক্তিকে নড়বড়ে করে দেয়, তখন বীর নারী মুসাইবা নিজের ভেতরে দারুণ ধাক্কা খান- মুশরিকরা যদি নবীজী সা:কে দেখে ফেলেন। নবীপ্রেমের অমিয়ধারায় তার সমস্ত মন-প্রাণ কানায় কানায় টইটম্বুর হয়ে গেছে। আহত সৈনিককে পানি খাওয়ানো থেকে বিরত হয়ে পানির মশকটি ছুড়ে ফেলেন তিনি। আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে পাশে অবহেলায় পড়ে থাকা শহীদ সাহাবির চকচকে ধারালো তলোয়ার হাতে তুলে নেন তিনি এবং বাঁচা-মরার কথা ভুলে গিয়ে তিনি নবীজী সা:কে পেছনে রেখে কামেয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে অটল প্রতিরোধ গড়লেন। নারী হয়েও তিনি যুদ্ধের ময়দানে শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টান্ত রচনা করলেন (ওহুদের যুদ্ধ : লুৎফুল হক)।সব কিছুর মূলে ইসলাম নারীকে শিতি হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। কারণ, সংসারে মা যদি শিতি হন, তাহলেই তো সেই ঘরের সবাই শিতি হয়ে গড়ে উঠবে। মা-ই হবেন প্রতিটি মানুষের প্রথম শিয়িত্রী, প্রতিটি সন্তানকে তিনি চারিত্রিক শিা, পারিবারিক শিা, সার্বিক সুশিা দেবেন। এভাবেই পুরো জাতি হবে সুশিতি আর সে শিার আলো একদিন ছড়িয়ে পড়বে দেশ থেকে দেশান্তরে, বিশ্ব হবে আলোকিত।একমাত্র ইসলামই দিয়েছে নারীর প্রাপ্য হিস্যা। ইসলাম নারীকে অধিকার দিয়েছে কিন্তু সীমালঙ্ঘন করার অধিকার দেয়নি। নারী যতই সীমালঙ্ঘন করেছে, ততই সে নির্যাতিত-নিপীড়িতও হয়েছে। আজ এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপী তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে কোমলমতি নারীদের ঘরের বাইরে বের করে তাদের বানিয়েছে পণ্য। পুরুষের ব্যবহৃতব্য বস্তুর বিজ্ঞাপনেও আজ অপ্রসাঙ্গিকভাবে নারীকে দাঁড় করে রাখা হয়।
বিশ্বনবী সা:-পূর্ব আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে নারীর যখন কোনোই সম্মান ছিল না, সেই তমসার দিকেই আবার ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে আজকের নারী সমাজকে। কিন্তু বড়ই পরিতাপ এ জন্য যে, নারীবাদীরা কবে আর বুঝবে যে, পথে নেমে সভা-সেমিনার করে, মিটিং, মিছিল, আন্দোলন করে নারী মুক্তি আদৌ সম্ভবপর নয়, মুক্তির একটাই মাত্র পথ, যে পথে মুক্তি দিয়েছিলেন প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা:।জগৎমাতা ফাতিমা রা:-এর কথা স্মরণ করে দেখুন, যিনি অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেও কারো প্রতি কোনোরূপ অভিযোগ অনুযোগ পেশ করেননি। নবীনন্দিনী ফাতিমা-তুজ-যোহরা নারীকুলের মহান আদর্শ ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কন্যা, জায়া, জননী নারী জীবনের যে পর্যায় থেকেই দেখা হোক না কেন, সর্বপর্যায় থেকে তিনি একজন মহান সফল নারী। সাংসারিক ও সামাজিক কাজে আদর্শ নারীর কর্মকাণ্ড কেমন বা কিভাবে হওয়া উচিত বিশ্ব নারীর জন্য সেই সুমহান শিা তিনি রেখে গেছেন।
তার সেই শিা ও আদর্শের পথ ধরে আজকের নারীসমাজ যদি চলতে পারে, তবে তাদের স্খলনের কোনো ভয় আর অবশিষ্ট থাকতে পারে না। তার মহান আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্য দিয়ে জীবনযাপনে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও মর্যাদার তাজ চির অমলিনই থেকে যাবে। জীবন হবে আলোকিত, সমৃদ্ধ ও গতিময়তায় পূর্ণ থাকবে সব নারী।
ইসলামি বই থেকে সংগৃহীতআইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে নারীর প্রতি ব্যভিচারের ইতিহাস আজো কেঁদে যায় অনন্ত আকাশে, বাতাসে, সবুজাভ পত্রপল্লবে। পুরুষেরা তখন নারীকে কেবল ভোগ বিলাসের পণ্য হিসেবেই গণ্য করেছিল, মা কী, বোন কী, না ছিল কারোর প্রতি এতটুকু কদর, শ্রদ্ধা-সম্মান, না ছিল মানুষ হিসেবে দেখার মতো মানসিকতা। জাহেলিয়াতের যুগে কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে অভিশাপ হিসেবে জ্ঞান করা হতো। নবজাত কন্যাশিশুকে হয় গলা টিপে না হয় জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করা হতো।
অন্ধকার যুগের সব পাপাচার পদমূলে পিষে দিয়ে আবির্ভূত হলো ইসলামের স্বর্ণযুগ। সব অনাচারের বিরুদ্ধে শান্তির স্লোগান মুখরিত হলো। মহানবী সা: নারীর প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। যে নারীকে পুরুষেরা কেবল ভোগের সামগ্রী মনে করত, যাদের জন্মকে অভিশাপ মনে করা হতো, প্রিয় নবীজী সা: তাদের জন্য রচনা করলেন মহামুক্তির উজ্জ্বল দিগন্ত। ঘোষণা করলেনÑ ‘মাতৃপদতলে সন্তানের বেহেশ্ত’। ধাপে ধাপে নারী পেল তার প্রাপ্ত মর্যাদা ও অধিকার এবং ঘোষণা হলোÑ ‘তোমরা সংযমী হও, নিজেদেরকে আড়াল করে রাখো। ঘরে ও বাইরে তোমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে পর্দাপ্রথার মাধ্যমে সমাধা করো।’অন্ধকার যুগে নারীদের প্রতি সেই ঘৃণ্য আচরণ সম্পর্কে পবিত্র কালামে পাকে আয়াত এসেছে, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে কিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়, তার গ্লানিহেতু সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে। (সে চিন্তা করে) হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে প্রোথিত করবে।
সাবধান, তারা যা করে তা কতই না নিকৃষ্ট’ (সূরা আন নাহল : ৫৮-৫৯)।এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যার কন্যাসন্তান আছে, সে তাকে জীবিত কবর দেয়নি, তাকে দীনহীন ও লাঞ্ছিত করেও রাখেনি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন’ (আবু দাউদ)।মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন দৃষ্টিকে নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, দৈহিক কামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের লজ্জাস্থান সম্পর্কে মুক্ত তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে’ (সূরা নূর : ৩১)।বলা বাহুল্য, উচ্ছৃঙ্খল মহিলাদের কারণেই সমাজে নানা ফেতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়। বোরকা পরা মহিলাদের দিকে কোনো ভিনপুরুষ একবারের বেশি দ্বিতীয়বার তাকাতে কুণ্ঠাবোধ করে। সততার প্রতি যে এক অমোঘ শ্রদ্ধা অবলীলায় তার সভ্যতা উদিত হয় হৃদয়ে। আর অর্ধনগ্ন মহিলাদের দেখে আকর্ষিত পুরুষ বারবার বিমোহিত হওয়ার জন্য সে দিকে চোখ ফেলে। হাদিস শরিফে স্পষ্টই বলা হয়েছে, ‘সুন্দরী নারী দেখে যদি কোনো পুরুষ বলে থাকে আমি এতটুকুও দুর্বল হইনি, তবে সে মিথ্যাবাদী।’আরেক হাদিসে আছে, ‘একজন পুরুষ (কুরআনে ঘোষিত যেসব মহিলাকে দেখা দেয়া যায় সেসব মহিলা ছাড়া) একজন মহিলা যখনই কাছাকাছি হয়, ইবলিস তখন তৃতীয় বন্ধু হিসেবে হাজির হয়।
’পুরুষের পে নারীকে অবমাননা আত্ম-অবমাননার শামিল। নারীর তি করলে নিজেকেই তিগ্রস্ত হতে হয়।নারীর অমর্যাদা সে তো সমগ্র মানবতারই অপমান। আইনত পুরুষ চিরকালই নারীর কাছে দায়বদ্ধ। নারীর সঠিক অবদানের ওপর ঋণী হয়ে নারীর সম্মান রার্থে পুরুষ অনস্বীকার্যভাবে বাধ্যগত।একদিন সফরের প্রাক্কালে উটের পা পিছলে যাওয়ার কারণে হজরত মুহাম্মদ সা: ও সুফিয়া রা: উটের পিঠ থেকে পড়ে গেলে হজরত তালহা রা: দৌড়ে এসে হুজুর সা:কে উঠানোর চেষ্টা করলে হুজুর পাক বললেন, ‘আগে মহিলাদের প্রতি ল করুন’।উম্মে ওয়ারাকা বিন্তে আবদুল্লাহ ইব্ন হারিস ইব্ন ইজাইম ছিলেন প্রিয় নবীজী সা:-এর প্রিয়ভাজনেষু। এই আনসারিয়া মহিলার বাড়িতে প্রিয় নবী সা: প্রায়ই যেতেন এবং তাকে শহীদ মহিলা বলে ডাকতেন। তিনিও নবীজী সা:কে অসাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন, আন্তরিকভাবে মহব্বত করতেন। বদর যুদ্ধের সময় তিনি নবী করীম সা:-এর কাছে আরজ করেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দিন। আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধাহতদের সেবাযতœ করব, তাদের জরুরি চিকিৎসা করব। আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধে আমাকেও শাহাদতের মর্যাদা দান করতে পারেন।’ রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাকে অবশ্যই শাহাদত নসিব করবেন। তুমি নিশ্চিন্তে বাড়িতে বসে থাকো, তুমি শহীদ।’উল্লেখ্য, নবীজী সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এই মহিলা তার নিজ বাড়িতেই শহীদ হয়েছিলেন। এরপর হজরত ওমর ফারুক রা: বললেন, প্রিয় নবীজী সা: ঠিকই বলেছিলেন। তিনি বলতেন, ‘এসো শহীদার নিকট হাজিরা দেই’ (নবী সা:-এর জীবনের অলৌকিক ঘটনাবলি : মাওলানা খলীলুর রহমান খান)।
কত মহিলাও প্রিয় নবীজী সা:কে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন। কুরআন-হাদিসের আদেশ-নিষেধ মেনে পর্দানশিন থেকে কত মহিলা রাসূল সা:-এর জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়েছেন। ওহুদের যুদ্ধে ইবনে কামেয়া যখন তার দলবল নিয়ে মুসলিম বাহিনীর প্রতিরোধ শক্তিকে নড়বড়ে করে দেয়, তখন বীর নারী মুসাইবা নিজের ভেতরে দারুণ ধাক্কা খান- মুশরিকরা যদি নবীজী সা:কে দেখে ফেলেন। নবীপ্রেমের অমিয়ধারায় তার সমস্ত মন-প্রাণ কানায় কানায় টইটম্বুর হয়ে গেছে। আহত সৈনিককে পানি খাওয়ানো থেকে বিরত হয়ে পানির মশকটি ছুড়ে ফেলেন তিনি। আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে পাশে অবহেলায় পড়ে থাকা শহীদ সাহাবির চকচকে ধারালো তলোয়ার হাতে তুলে নেন তিনি এবং বাঁচা-মরার কথা ভুলে গিয়ে তিনি নবীজী সা:কে পেছনে রেখে কামেয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে অটল প্রতিরোধ গড়লেন। নারী হয়েও তিনি যুদ্ধের ময়দানে শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টান্ত রচনা করলেন (ওহুদের যুদ্ধ : লুৎফুল হক)।সব কিছুর মূলে ইসলাম নারীকে শিতি হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। কারণ, সংসারে মা যদি শিতি হন, তাহলেই তো সেই ঘরের সবাই শিতি হয়ে গড়ে উঠবে। মা-ই হবেন প্রতিটি মানুষের প্রথম শিয়িত্রী, প্রতিটি সন্তানকে তিনি চারিত্রিক শিা, পারিবারিক শিা, সার্বিক সুশিা দেবেন। এভাবেই পুরো জাতি হবে সুশিতি আর সে শিার আলো একদিন ছড়িয়ে পড়বে দেশ থেকে দেশান্তরে, বিশ্ব হবে আলোকিত।একমাত্র ইসলামই দিয়েছে নারীর প্রাপ্য হিস্যা। ইসলাম নারীকে অধিকার দিয়েছে কিন্তু সীমালঙ্ঘন করার অধিকার দেয়নি। নারী যতই সীমালঙ্ঘন করেছে, ততই সে নির্যাতিত-নিপীড়িতও হয়েছে। আজ এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপী তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে কোমলমতি নারীদের ঘরের বাইরে বের করে তাদের বানিয়েছে পণ্য। পুরুষের ব্যবহৃতব্য বস্তুর বিজ্ঞাপনেও আজ অপ্রসাঙ্গিকভাবে নারীকে দাঁড় করে রাখা হয়।
বিশ্বনবী সা:-পূর্ব আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে নারীর যখন কোনোই সম্মান ছিল না, সেই তমসার দিকেই আবার ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে আজকের নারী সমাজকে। কিন্তু বড়ই পরিতাপ এ জন্য যে, নারীবাদীরা কবে আর বুঝবে যে, পথে নেমে সভা-সেমিনার করে, মিটিং, মিছিল, আন্দোলন করে নারী মুক্তি আদৌ সম্ভবপর নয়, মুক্তির একটাই মাত্র পথ, যে পথে মুক্তি দিয়েছিলেন প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা:।জগৎমাতা ফাতিমা রা:-এর কথা স্মরণ করে দেখুন, যিনি অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেও কারো প্রতি কোনোরূপ অভিযোগ অনুযোগ পেশ করেননি। নবীনন্দিনী ফাতিমা-তুজ-যোহরা নারীকুলের মহান আদর্শ ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কন্যা, জায়া, জননী নারী জীবনের যে পর্যায় থেকেই দেখা হোক না কেন, সর্বপর্যায় থেকে তিনি একজন মহান সফল নারী। সাংসারিক ও সামাজিক কাজে আদর্শ নারীর কর্মকাণ্ড কেমন বা কিভাবে হওয়া উচিত বিশ্ব নারীর জন্য সেই সুমহান শিা তিনি রেখে গেছেন।
তার সেই শিা ও আদর্শের পথ ধরে আজকের নারীসমাজ যদি চলতে পারে, তবে তাদের স্খলনের কোনো ভয় আর অবশিষ্ট থাকতে পারে না। তার মহান আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্য দিয়ে জীবনযাপনে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও মর্যাদার তাজ চির অমলিনই থেকে যাবে। জীবন হবে আলোকিত, সমৃদ্ধ ও গতিময়তায় পূর্ণ থাকবে সব নারী।